প্রচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে আজ মোংলা পৌরশহর জুড়ে। প্রচার প্রচারনার শেষ দিনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। কর্মী-সমর্থকেরা নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের মন জয় করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট কেমন হবে, নিজেদের ভোট দিতে পারবেন কি না এসব নিয়ে ভোটাররাও এখন ব্যস্ত চুলচেরা বিশ্লেষণে।
ভোটারদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, মোংলা পৌরসভায় এবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হবে। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় এবার নারীরাও বেশ সরব। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নারীরা দল বেঁধে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, পৌরশহর উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত প্রার্থীকে বেচে নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত জনপ্রতিনিধিকে ভোট দিবেন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আব্দুর রহমান দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আর বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র জুলফিকার আলী। বড় দুই রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় লড়াই এখন তুঙ্গে।
পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাজার, সড়ক, বিভিন্ন মোড়, চায়ের দোকান ও পাড়া মহল্লার অলিগলিতে ছেয়ে গেছে পোস্টারে। তাকালেই চোখে পড়বে সারি সারি ঝুলানো পোস্টার। চা দোকানগুলোতে চলছে নির্বাচনী আড্ডা। সাধারণ মানুষের সরব আলোচনায় বোঝা যাচ্ছে জমে ওঠেছে এবারের পৌর নির্বাচন।
ভোটাররা চাচ্ছেন যোগ্য মেয়র। তাঁদের প্রত্যাশা চাই সততা, চাই দুর্নীতিমুক্ত একজন মেয়র। যিনি হবেন কর্মঠ ও জনবান্ধব, থাকবে কথায় এবং কাজে মিল। মোংলাকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলবেন। যেখানে থাকবে পার্ক, রাস্তাঘাট হবে উন্নত, ড্রেনেজ ব্যবস্থা হবে টেকসই, থাকবে না জলাবদ্ধতা, হাট বাজার হবে উন্নত, বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে বৈষম্যহীন, বাড়বে নাগরিক সুবিধা। আর এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক সমৃদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে দেখতে চান অধিকাংশ স্থানীয় নাগরিকেরা।
বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জুলফিকার আলী বলেন, ‘পৌরসভার উন্নয়নের জন্য গত ১০ বছর কাজ করেছি। নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও পৌরবাসির নাগরিক সেবা দিয়েছি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে আবারও মেয়র নির্বাচিত করবে বলে তিনি আশা করেন।’
আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী শেখ আব্দুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে দেশ উন্নয়নে ছেঁয়ে গেছে। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারকে দরকার। তাই প্রথমবার জনপ্রতিনিধি হিসেবে দলীয় প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। নির্বাচনে জয়ী হলে মোংলার উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাবো। পৌরবাসির ভোটে শতভাগ বিজয় হবেন বলে তিনি আশাবাদী।’
আজ মধ্যরাত থেকে সকল প্রচার প্রচারনা বন্ধ থাকবে।
মোংলা পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি। নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ পৌরসভায় ৩১ হাজার ৫২৮ জন ভোটার রয়েছে। এবারের নির্বাচনে দু‘জন মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১২ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পুর্ন হয়েছে।
সরকার ভোটারদের ভোটদানের সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী পৌরএলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।
নির্বাচনী এলাকায় আগামিকাল মধ্যরাত থেকে আগামি শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত আইন শৃঙ্খল বজায় রাখার জন্য র্্যার, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি বিজিবি সদস্য মোতায়ন করার প্রস্তুতি চলছে । সকল ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িক্ত পালন করবে।
এদিকে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন আআগামিকাল মধ্যরাত থেকে সকল প্রকার মটোরযান চলাচলের উপর নির্বাচনী এলাকায় নিশেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে রিটার্নিং অফিসারের অনুমিত সাপেক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও তাদের এজেন্ট, দেশি বিদেশি পর্যাটক, সাংবাদিকসহ সেবাদানে ব্যাবহারিত বিদ্যুৎ, ঔষধ, এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের মটোরযান ও রিক্সা ভ্যান এ নিশেধাজ্ঞার আওত্বামুক্ত থাকবে।