নাম সর্বস্ব ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে নেত্রকোনার পূর্বধলায় বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারি বিভিন্ন ভাতাসহ বই উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র। শুধু তাই নয় জমিদাতার ছেলেকে পরিচালনা কমিটির সভাপতি বানিয়ে নানা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে স্বাক্ষর জাল করে দেয়া হয়েছে শিক্ষক নিয়োগ। রয়েছে প্রশাসনের পরিদর্শন বইও।
এ বিষয়ে জালিয়াতির শিকার ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীসহ লিখিত অভিযোগ করলে দীর্ঘদিনেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার পূর্বধলা উপজেলার গোহালাকান্দা ইউনিয়নের শুভখাই গ্রামের মৃত রজব আলীর ১৯৭৮ সালে দেয়া শুভখাই এবতেদায়ী মাদ্রাসার নামে দেয়া ৪২ শতাংশ জমিতে কোনরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিহ্ন নেই। ঘাস খাচ্ছে গরু। অথচ কাগজপত্রে এবতেদায়ী মাদ্রাসা দেখিয়ে প্রতিবছর সরকারি বইসহ বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন করছে একই গ্রামের একটি মহল।
গত ২০১৩ সাল থেকে ভুয়া কমিটি করে শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র ছাত্রীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণসহ পাশের হার ভালো দেখিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করেছেন তারা। এমনকি করোনাকালীন ভাতা উত্তোলনও করেছেন ওই অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া শিক্ষকরা। কাগজে পত্রে উল্লেখিত বিল্ডিং, টিউবওয়েল বেঞ্চসহ কোন কিছুই নেই দৃশ্যমান। জমিদাতার ছেলে ফজলুল হককে সভাপতি বানিয়ে স্বাক্ষরিত বিভিন্ন চিঠিতে বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে। স্বাক্ষরেও রয়েছে ভিন্নতা। সেইসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেক মারফত ২০ হাজার টাকার চেক উত্তোলন করা হয়েছে।
এদিকে জমিদাতার ছেলেকে সভাপতি করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি করলেও সদস্যরা জানেন না কেউই। স্বাক্ষর জালিয়াতি করে দেয়া হয়েছে শিক্ষক নিয়োগও।
অভিযোগ করে স্থানীয় গ্রামবাসী বলছেন, এমন অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করলেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। গ্রামের অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর এক হাজার টাকা দেয়ার অভিযোগ শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের।
অভিযুক্ত মাদ্রসার সহকারী শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুল আলমের সাথে কথা বলতে বলেন। তিনি কিছু জানেন না।
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলম জানান, ‘তিনি এখন এই প্রতিষ্ঠানের সাথে নেই। এটি এলোমেলো। বেতন ভাতা পান নি। এটি ছেড়ে দিয়েছেন।’
এদিকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল বারী করোনাকালীন শিক্ষক ভাতার তালিকা পাঠানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি তালিকা পাঠিয়েছি ঠিক আছে, কিন্তু পেয়েছে কিনা জানি না।
তিনি বলেন, ইউএনওর নির্দেশ আছে কথা না বলতে। ইউএনও পরিদর্শন করে এসেছেন।
একটি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের কিভাবে তালিকা দেয়া হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব মাদ্রাসা তো এতো দেখা হয় না। কাগজপত্র দেখেছি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুমের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি বিরক্তির সুরে বলেন, ‘এ বিষয়ে মাধ্যমিক কর্মকর্তা আছে সেখানে যান। আমার কাছে কি? কেউ অসেনি অভিযোগ নিয়ে।’
তবে পরবর্তীতে দীর্ঘক্ষণ বসার পর ভুয়া প্রতিষ্ঠানের পাশে মুয়াজ্জিনের ঘর দেখিয়ে বললেন, ‘একটা স্থাপনা আছে। এলাকায় কিছুটা সমস্যা রয়েছে।
অন্যান্য অনিয়ম সম্পর্কে তিনি বলেন, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, সোমবার বিকালে ইউনওর বক্তব্য আনার পরপরই জমিদাতার ছেলেকে ডেকে পাঠিয়েছেন ইউএনও। তাদেরকে চাপ দিচ্ছেন মোয়াজ্জিনের ঘরটি দেখাতে এবং ভুয়া মাদ্রাসার পক্ষে রাজি হয়ে যেতে। এ বিষয়টি সময়নিউজকে নিশ্চিত করেছেন জমিদাতার ছেলে হাবিবুর রহমান।
সূত্রঃ সময় নিউজ