সারাদেশে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। সরকার এই পরিস্থিতিতে হাতধোয়া ও মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিভিন্ন অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘নো মাস্ক- নো সার্ভিস’ কার্যক্রম শুরু করেছে।
কিন্তু এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে নওহাটা পৌর ভবনে। এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই। আগের মত চলছে সবকিছু। যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তিনি অফিসে থাকেননা। ফলে এখান থেকেই ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনাভাইরাস।
জানা গেছে, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হন পবা উপজেলার বাসিন্দারা। আর পবা উপজেলা তথা রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত হন নওহাটার মানুষ।
মৃত্যুও হয় এখানকার বাসিন্দা উপজেলা চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনের। পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, পবায় এখন পর্যন্ত মোট করোনা টেস্ট করা হয়েছে প্রায় ১৩ শ জনের। এতে করোনা আক্রান্ত পাওয়া গেছে ৩৩২ জন। এরমধ্যে শুধু নওহাটা পৌরসভার এক শ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। যারমধ্যে নওহাটা পৌরসভার রয়েছেন ৫ জন।
নওহাটা পৌরসভার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা পৌর ভবন। এখানে প্রতিদিন শতশত মানুষ সেবা নিতে আসে। এখানকার চারজন স্টাফ ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখন শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। সরকারের রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কঠোর নির্দেশনা। কিন্তু নওহাটা পৌরসভায় দেখা গেছে এর কোন বালাই নেই। এখানে ভবনের প্রবেশমুখে রাখা হয়নি হাত ধোবার কোন ব্যবস্থা। মাক্স ছাড়াই সেবা দিচ্ছেন ও সেবা নিচ্ছেন দাতা-গ্রহিতারা।
স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিয়ে নওহাটা পৌরসভার সচিব মিজানুর রহমান বলেন, করোনাকালে সরকারি নির্দেশনা মেনে সকলকে সেবা দিতে বলা হয়েছে। পৌরসভার দারোয়ান সিরাজুল ইসলামকে নির্দেশ দেয়া আছে, হাত না ধুয়ে ও মাক্স না পরে কেউ যেন ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তার উল্টোটা। হাত ধোবার কোন ব্যবস্থা পৌরসভার গেটের কাছে নেই। আর মাস্ক ছাড়াই অনেকে সেবা নিচ্ছেন। আর ভবনের গেটে দারোয়ান সিরাজুল ইসলাম সিরাজের কোন দেখা নেই।
পৌরসভার কয়েকজন কর্মকর্তা -কর্মচারি জানান, প্রায় সাত বছর হলো দারোয়ান সিরাজের চাকুরিতে যোগদান করার। আজ পর্যন্ত সে কোনদিন দারোয়ানের পোশাক পরেনি। দায়িত্ব বলতে তার ইচ্ছেমত অফিসে এসে চেয়ারে বসে ২/৩ ঘন্টা মোবাইলে ফেসবুক চালিয়ে আবার নিরুদ্দেশ হয়ে যায় সে। কর্মকর্তাদের সম্মান জানানো তো দুরের কথা, অফিসে থাকার সময় কে অফিসে ঢুকলো আর কে বের হলো সেদিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
নওহাটা সাহাপাড়ার মোড়ে তার গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা বিক্রির এবং বিকাশের দোকান রয়েছে। অফিস ফাঁকি দিয়ে সে দোকানে বসে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তার ওই দোকানে চলে মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজনের আড্ডা।
এলাকাবাসী বলেন, সিরাজের এই গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির দোকানটিও চলে অবৈধ ভাবে। নওহাটা ফায়ার স্টেশনের একটি সূত্র জানায়, দোকানে বিক্রির জন্য আটটি পর্যন্ত সিলিন্ডার রাখলে ফায়ার লাইসেন্স নিতে হবে এবং অগ্নি নির্বাপনী সিলিন্ডার রাখতে হবে। দোকানে ৮টির বেশি সিলিন্ডার থাকলে বিস্ফোরক লাইসেন্স নিতে হবে। নওহাটার ২/১ জন ছাড়া কারোরি নেই এইসব লাইসেন্স।
দারোয়ান সিরাজের এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখেও লোকজন ভয়ে তাকে কিছু বলেনা। এই পরিস্থিতিতে নওহাটা পৌরসভায় আবারো যে করোনা ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এলাকাবাসি এব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।